মতিউর রহমান মল্লিক ও গোলাম মোহাম্মদ জাতীয় চেতনার কবিপুরুষ_মাহফুজুর রহমান আখন্দ

মতিউর রহমান মল্লিকএকজন কবিকে বেঁচে রাখার জন্যে একটি কবিতাই যথেষ্ট; যেমনটি- ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই’ কবিতাটিই যথেষ্ট কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর বেঁচে থাকার জন্যে; কবি আল মাহমুদ অত্যন্ত দৃঢ়ভাষায় বলেছিলেন কথাগুলো। যদিও সৈয়দ মুজতবা আলী একটি গ্রন্থের কথা বলেছিলেন এভাবে,
‘রুটি-মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে
কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়।’
‘আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে উঠবো আমি ডাকি’
কবিতাটি যেমন কাজী নজরুল ইসলামকে চেনার জন্যে শিশুদের কাছে যথেষ্ট তেমনি তাঁর বিদ্রোহী কবিতা তাঁকে সকল মানুষের কাছে বিদ্রোহী কবি বলে পরিচিত করে রেখেছে। একেকজন কবির জন্যে এ রকম একটা দুটো সৃষ্টি তাঁকে জনসম্মুখে অমর করে রাখে। এ রকম অসংখ্য অমর পঙক্তির নির্মাতা বাংলাভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম দুই শক্তিমান কবি মতিউর রহমান মল্লিক ও গোলাম মোহাম্মদ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে (মল্লিক ১ মার্চ ১৯৫৬; গোলাম মোহাম্মদ ২৩ এপ্রিল ১৯৫৯) পৃথিবীর মুখ আলোকিত করেছিলেন দুই কবিবন্ধু। দুজনই এসেছেন বাংলাদেশের দণিক্ষাঞ্চলের (মল্লিক বাগেরহাট; গোলাম মোহাম্মদ মাগুড়া) ছায়াঢাকা সবুজপল্লীর রাজমুকুট নিয়ে। আবার দুজনই অতি অল্প বয়সে বন্ধুস্বজনকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে (মল্লিক ১২ আগস্ট ২০১০; গোলাম মোহাম্মদ ২২ আগস্ট ২০০২) চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। দুজনের মধ্যে কি অসাধারণ মিল। এ মিল শুধু যাওয়া আসাতেই নয়, এ মিল ছিল আদর্শের, এ মিল ছিল হৃদয়ের; এ বন্ধন ছিল সীসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুত। গান ও কবিতা রচনার েেত্রও দুজনই অসাধারণ পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। স্বদেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনায় দুজনই ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা পুরুষ। পঙক্তির ভাঁজে ভাঁজে তাঁরা নির্মাণ করেছেন দেশ-জাতি ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার শৈল্পিক চেতনা।
বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় স্বদেশ। নিজের দেশ মানে নিজের শরীর, নিজের আত্মা। কবিরা দেশকে ভালোবাসেন তাদের স্বপ্নগত কারণেই। কারণ দেশপ্রেম না থাকলে স্বপ্নরা সফলভাবে ধরা দেয় না। আর স্বপ্ন না থাকলে কবি হওয়া কঠিন। কবি মতিউর রহমান মল্লিক ও গোলাম মোহাম্মদ দেশকে ভালোবেসেছেন হৃদয় দিয়ে; মমত্ববোধের রজ্জু দিয়ে স্বদেশকে বেঁধেছেন বিশ্বাসের আবহে। তাইতো আজীবন যৌবনা দেখতে চেয়েছেন তাদের এ প্রিয় জন্মভূমিকে। কিন্তু আমাদের প্রিয় স্বদেশ কি আগের মতোই যৌবনা আছে? গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু পুকুর ভরা মাছ; এসব এখন যেন কল্পনার ফানুস। পুকুর ডোবার যৌবনা ছবি আঁকতে কোনো কবি যখন বলেন,
‘শিউলি পাড়া নদীকূলের কাশবনে
বকের সারি ওড়াউড়ি বাঁশবনে
বরফঝরা দুধের নহর
কিংবা
পাতা ফুলের শহর
পুকুর ধারে মিষ্টি বিকেল ঘাসবনে;’
(ধনচে ফুলের নাও)
এ চিত্র যেন কাল্পনিক হয়ে ধরা দেয় তাদের কাছে। কারণ এখন পুকুর নদীর সেই যৌবনা ভাব নেই। নদীগুলো মরা সোঁতা আর পুকুরগুলো এখন ভরাট ভূমি কিংবা বসতবাড়ির ভিটেতে পরিণত হচ্ছে। প্রিয়ভূমির সেই চিত্র আঁকতে গিয়ে ব্যাপকভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন কবি মতিউর রহমান মল্লিক।
তোমার কিশোরকালের
মত এতো পুকুরও তুমি কোথাও পাবে না
এবং তোমার প্রগাঢ় পল্লবের মত এমন
যৌবনও তুমি কোথাও পাবে না
(বিলের দিকে: অনবরত বৃরে গান)
একই বিষয়ে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন কবি গোলাম মোহাম্মদ। নদী নালা খাল বিল আর ধানের দেশ গানের দেশ এখন কি আর সে রকম আছে? কিন্তু কেন থাকলো না? বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় সেগুলো তো আরো বেশি সবুজাভ করা যেতে পারতো। কিন্তু কেন তা পারা যাচ্ছে না। কিন্তু কোন উত্তর আছে কি?Golam Muhammad
এই মাঠে কি সবুজ সোনার ধান ছিল না,
চাষির তাজা প্রাণ ছিল না?
কোথায় আমার সেই শিহরণ সোনার ধানের শিষ
কে ছড়াল বুকে এমন আগুন ব্যথার বিষ।
(আমার সবুজ মাঠে: রচনা সমগ্র, পৃ. ৮৮)
পানির অপর নাম জীবন। এটা শুধু মানুষ কিংবা অন্য কোন প্রাণির েেত্র নয়, দেশের জন্য, দেশের মাটির জন্যও ধ্রব সত্য। উজানের ঢেউ যেমন কান্নায় ভাসিয়ে নিতো বাংলাদেশের পল্লীগ্রাম তেমনি পল্লীর আঁচলে ছেয়ে দিতো সবুজের সমারোহ। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশের বৈরি আচরণ এবং ফারাক্কাসহ হাজারো বাঁধের পৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছে বাংলাদেশের নদ নদী। তাইতো কবি গোলাম মোহাম্মদের জিজ্ঞাসা-
এই মাঠে কি গহীন গাঙের তীর ছিল না?
ফুল পাখিদের ভিড় ছিল না?
কে কেড়েছে আমার নদীর উছল করা পানি?
আমার সবুজ মাঠ কেন আজ শুষ্ক মরুর কানি?
(আমার সবুজ মাঠে: রচনা সমগ্র, পৃ. ৮৮)
শুধু ফারাক্কায় নয়; এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে শহরে বন্দরে, গ্রামে লোকালয়ে, পথে প্রান্তরে এমনকি মাঠে ঘাটে নদী পুকুরে। তাইতো কবি মতিউর রহমান মল্লিকের উৎকণ্ঠা-
‘এই অন্ধকার, বিশ্বসিত আকাশের পরপার থেকেও নামতে পারতো
কিন্তু তা না নেমে
এই অন্ধকার একটি কেন্দ্রিকৃত অবস্থান থেকে
লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে
ছড়িয়ে পড়েছে পথ ও প্রান্তরে
ছড়িয়ে পড়েছে পল্বল ও পথপ্রান্তে
ছড়িয়ে পড়েছে নদী, নন্দন ও নান্দনিকতায়’
(এই অন্ধকার: নিষন্ন পাখির নীড়ে)
কবি গোলাম মোহাম্মদ আশঙ্কা করেছেন আরো গভীরতার পরিমাপে। ফারাক্কার সুবাদে এখন যেমন পদ্মার জীবনে পানিশূন্যতা মরুভূমির বালি; সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে চুরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের সোনাঝরা সকাল বিকেল। স্বকীয় জীবনধারায় নেমে এসেছ পশ্চিমাবিশ্বের নষ্টধারা। ঐতিহ্যধারার শেকড় উপড়ানোর সকল আয়োজন সমাপ্ত হতে চলেছে। হয়তো একদিন আমাদের পদ্মা-যমুনাকে ভুলতে হবে। এ আশঙ্কায় তিনি উচ্চারণ করেন-
বাক্সা ঘাসের মতো তরতাজা সকাল বিকেল
পাটশাক তুলে নেয়া মেয়ের আঁচল
চোখের পলকে সব কোথায় উধাও
কোথায় উধাও সুখ ভাটিয়ালী, পুঁথি ও পয়ার
ভুলতে ভুলতে আমি ভুলে যাব পদ্মা মেঘনা নাম।
(ঘাসফুল বেদনা : রচনা সমগ্র, পৃ. ১১০)
এ ধরনের ভয়াবহতার জন্যে যাদেরকে দায়ী করা হচ্ছে শুধু তারাই দায়ী নয়; আমাদের স্বদেশীদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে হাজারো মীরজাফর-জগৎশেঠ। দাঁতাল শুয়োরের মতো তারা আমাদের সভ্যতার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অসহায় সিরাজউদ্দৌলারা আশঙ্কা করছেন আরো কয়েক হাজার পলাশী নাটকের। তাই কবি মতিউর রহমান মল্লিকের উচ্চারণ-
মীর জাফরের পদভারে দেশ
জর্জরিত
কাইভ এবং ইস্ট ইন্ডিয়া
সব জড়িত
বাংলাদেশের সর্বনাশের
পেছনে আজও
জগৎ শেঠেরা হয়নিতো শেষ:
তাদের কাজও।
[ঈদ: পুষ্পিত বনের বৃত্তান্ত : নিষণ্ন পাখির নীড়ে]
শুধু বাংলাদেশ নয়; সারা বিশ্বে মুসলমানরাই যেন অসহায়। মানচিত্রের যেখানেই মুসলিম বসবাসের স্যা সেখানেই ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। বৃটিশ কলোনীগুলো স্বাধীন হলেও প্রত্যেকটা অঞ্চলে একেকটা করে দাবানল জ্বালিয়ে রেখে গেছে তারা। ভারতে কাশ্মির এবং মিয়ানমারে আরাকান যার উজ্বল উদাহরণ। এসব অঞ্চলের মূল অধিবাসী মুসলমান হলেও তারা নিজ ভূমে পরবাসী। বুকের তাজা খুনের উপর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পরাধীনতার কলঙ্কিত ইতিহাস। রোসাঙ্গের ইতিহাসখ্যাত মুসলমানদেরকে এখন সেখানকার বহিরাগত অভিবাসী হিসেবে পরিচিত করানো হচ্ছে। হাজার হাজার মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে নাফ নদীর পানি। রোহিঙ্গা মুসলমান জনপদজুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। ল ল রোহিঙ্গা আজ দেশছাড়া। নারী শিশু বৃদ্ধের অমানবিক জীবন বিশ্বের অসভ্যতার ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। বিশ্ব মোড়লরা আজ যেন নীরব দর্শক। তাইতো কবি মতিউর রহমান মল্লিকের আপে-
রোহিঙ্গাদের বুকের উপরে স্বাধীনতা বিরোধীরা
আরকানীদের মাথার উপরে গৃধ্নের কালো ছায়া
(তবু আকাশে চাঁদ: তোমার ভাষায় তীক্ষণ ছোরা)
কবি গোলাম মোহাম্মদের কলমেও উঠে এসেছে হৃদয়স্পর্শী পঙক্তিমালা-
একদিন যে রোহিঙ্গা রমণী তসবি জপতে জপতে
সন্তান ও স্বামীর সম্মুখে ইফতারের আয়োজন বাড়িয়ে দিতো
আজ তার ইফতার নেই, সেহরি নেই, পলাতক সন্তান, নিখোঁজ স্বামী
অনিশ্চিত উদ্বাস্তু শিবিরে দুঃস্বপ্নের পাহাড় দুচোখে
বিপন্ন মানবতার জন্যে রোজাদার আজ কোন্ প্রার্থনা করবে?
(প্লাবিত প্রার্থনা: রচনা সমগ্র)
দেশপ্রেম ও মানবতাবাদের আদর্শে উজ্জীবিত বাংলাসাহিত্যের শক্তিমান এ দুই কবির লেখায় উঠে এসেছে এ রকম হাজারো চিত্র। কবিতা, ছড়া এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধেও তাঁরা দেশ ও জাতির জন্য বলিষ্ঠ ভাষায় সাহসী উচ্চারণ করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সফল উত্তরসূরী হিসেবে সঙ্গীতের জগতেও ঢেউ তুলেছেন সফলভাবে। বিশ্বাসী ধারায় তারা এক সফল স্রোত বিনির্মাণেও সফল হয়েছেন পুরোপুরি। গানে গানেও গেয়েছেন মানতাবতার জয়গান। প্রভূপ্রেমকে সম্বল করে তার দেশ জাতি ও মানবতার জন্য লিখে গেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে-
আমাকে দাও সে ঈমান আল্লাহ মেহেরবান
যে ঈমান ফাঁসির মঞ্চে অসঙ্কোচে
গায় জীবনের গান।
একই ধারায় কবি গোলাম মোহাম্মদও উচ্চারণ করেছেন-
সেই সংগ্রামী মানুষের সারিতে
আমাকেও রাখিও রহমান,
যারা কুরআনের আহ্বানে নির্ভীক
নির্ভয়ে সব করে দান।
(সেই সংগ্রামী মানুষের সারিতে: রচনা সমগ্র ২১৩)
কবি আল মাহমুদ প্রায়ই বলেন, কবিদের কাজ স্বপ্ন দেখানো। তারা জাতিকে স্বপ্ন দেখায়। কাজী নজরুল ইসলামও বলেছেন, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’; কবি ফররুখ আহমদ তাই ডাক দিয়েছেন-
‘ছিঁড়ে ফেলে আজ আয়েশী রাতের মখমল অবসাদ
নতুন পানিতে হাল খুলে দাও, হে মাঝি সিন্দবাদ’।
পূর্বসূরিদের এমন আহ্বানে সর্বান্তঃকরণে জেগে উঠেছিলেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক ও কবি গোলাম মোহাম্মদ। তাইতো কবি মতিউর রহমান মল্লিক করুণ কণ্ঠে প্রভুর কাছে দুআ করেছেন গানে গানে-
‘দাও খোদা দাও হেথায় পূর্ণ ইসলামী সমাজ
রাশেদার যুগ দাও ফিরায়ে, দাও কোরানের রাজ।’
কবি গোলাম মোহাম্মদও গেয়েছেন একই সুরে-
‘খোদা সকল কিছুর বদল হলেও
তোমার শাসন দাও/ শক্তি নাও মোর সম্পদ নাও
না হয় আমার জীবন নাও’।
আজ দুজনেই প্রভুর কাছে চলে গেছেন। পরিবারের সদস্যদের ছাড়াও হাজারো অনুরাগী রেখে গেছেন; যারা তাদের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাইতো বলা যায়, শুধু স্বপ্ন বিনির্মাণে নয়; সত্যিকার অর্থেই তারা জাতীয় চেতনার সফল কবিপুরুষ।
লেখক: অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
mrakhanda@gmail.com

সিডর

নিষণ্ন পাখির নীড়েমতিউর রহমান মল্লিক

সিডর দিয়েছে ডর
বিপন্ন অন্তর
সিডর দিয়েছে স্বজন-হারানো গুমরিত প্রান্তর
দিয়েছে করুণ মৃত্যুর হাহাকার
দিয়ে গেছে খুলে ভয়াল সিডর
বেদনার যত অশ্রুসিক্ত দ্বার
আর দিয়ে গেছে বুকফাটা চিৎকার
ধস্ত বিরান বিবর্ণ সংসার।

বৃক্ষ উজাড়
দুমড়ে-মুচড়ে গেছে বনভূমি। ভার
বইবার নেই সেই প্রকৃতিও
অবিরাম কান্নার
হরিণ চিত্রা নেই
বাঘ বিচিত্রা নেই
থেমে গেছে কবে
বনমোরগের ডাক
অজানা কতযে প্রাণী
গিলেগিলে খেলো ক্রূর বিষখালি বাঁক
তৃণলতা নেই
ধানতে নেই
পুষ্পের প্রিয় অভিপ্রেত নেই
ফসলের গান-সমবেত নেই
দিক সে চিহ্নহীন
পাখি মরে গেছে-
দীপ্ত মুয়াজ্জিন
নীচে নেমে এলো
বন্যাপীড়িত নিষ্ঠুরতম দিন।
বিস্তারিত পড়ুন

শিল্পী-কবি মতিউর রহমান মল্লিক_শরীফ আবদুল গোফরান

mollik_vaiতোমরা কবি-গীতিকার মতিউর রহমান মল্লিকের নাম অবশ্যই শুনেছো। আর না শোনারও কথা নয়। কারণ তিনি তো তোমাদের মতো ছোট্ট বন্ধুদের অনেক ভালোবাসতেন। পত্রিকার পাতায় পাতায় ছন্দে ছন্দে তোমাদের জন্য কতো গান-কবিতাই না লিখেছেন। বাংলাসাহিত্যে বিশেষ করে শিশুতোষ সাহিত্যের বাঁকে বাঁকে ছিলো তার বিচরণ। তিনি তোমাদের মতো ছোট্ট কুঁড়িদের কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন দেখো-
ফুলকুঁড়িদের মাঝে আমার থাকতে লাগে ভালো
ফুলকুঁড়িরাই জ্বালছে দেশে জ্ঞান-গরীমার আলো।
তারা তো নয় কাগজের ফুল মেকী ফুলের কুঁড়ি।
আসল ফুলের মেলা বসায় সারাটা দেশ জুড়ি।
আশার আলো লুটছে তারা অনেক অনেক পড়ে
পৃথিবীকে গড়ছে তারা নিজকে আগে গড়ে।
তাদের বড়ো ভালোবাসি বড়োই আপন ভাবি
তারাই কভু তুলে নেবে দেশ চালাবার চাবি।
সকল মিথ্যা উৎপাটনে সত্য অবিচল
ফুলকুঁড়িরাই তাড়িয়ে দেবে সকল অমঙ্গল।

তা হলে বুঝতেই পারছো। তিনি তোমাদেরকে কতো ভালোবাসতেন। সেই প্রিয় মানুষটির কথাই তোমাদেরকে বলছিলাম। কবি মতিউর রহমান মল্লিক কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন জানো? বলছি শোন। ১৯৫৬ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার রায়পাড়ার বারুইপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুন্সী কায়েম উদ্দিন মল্লিক আর মাতা আছিয়া খাতুন।
বিস্তারিত পড়ুন

ট্রানজিট

নিষণ্ন পাখির নীড়েমতিউর রহমান মল্লিক

ট্রানজিট দাও, ট্রানজিট দাও বন্ধুরা আপাতত।
নাইবা দিলাম জল
নাইবা দিলাম
চালের মতোন বাঁচবার সম্বল।
রাখি-বন্ধন-ঘোড়াতো দিয়েছি
পাঁচ-ছয়টার মতো-
ট্রানজিট দাও, ট্রানজিট দাও বন্ধুরা আপাতত।

সীমান্তে কাড়ি প্রতিদিন বিডিআর
সাধারণ লোক? তাও গাড়ি বর্ডারে
কৃষক-মজুর-গ্রাম্য নির্বিচারে।
গাড়বো না কেনো?
কেনো গাড়বো না?
যা খুশি করতে কেনো পারবো না?
পারবো না কেনো?
পাকওয়ালাদের বারোটা বাজিয়ে
হানাদারদের পাঁজরে ঘা দিয়ে
এইতো সেদিন তোমাদের হাতে
দিয়েছি যে তুলে পতাকা স্বাধীনতার!
ভোলো তাই যতো
বিধিসম্মত
চিরঅত
বিমল ভাষ্য একাত্তরের যুদ্ধের
চেতনার!
এখনি সময়- এবং সময় মতো
ট্রানজিট দাও ভ্রাতৃরা আপাতত।
একাত্তরের বিনিময় দাও
কৃতজ্ঞতার এটাই ক্রান্তি-  প্রান্তীয় বস্তুত-
ট্রানজিট দাও, ট্রানজিট দাও ভৃত্যরা আপাতত। বিস্তারিত পড়ুন

স্মৃতি পাতায় মল্লিক_আবদুল হালীম খাঁ

স্মৃতিচারণ করতে কার না ভালো লাগে। আর সে স্মৃতিটা যদি হয় বিশেষ প্রিয়জনের তা হলে ভালোর সঙ্গে আনন্দও জাগে প্রচুর। তার স্মৃতির সঙ্গে নিজকে জড়িয়ে কথা বলতে, তার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা অন্যকে জানাতে দারুণ ইচ্ছে করে। কবি গালিব তার প্রিয়তমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন :

‘ভালোবাসা অথবা ঘৃণা যা দেবে নেবো তাই,

তোমার সাথে আমার একটা সম্পর্ক চাই।’

আমারও তেমন ইচ্ছে করে। কবি মতিউর রহমান মল্লিক তেমনি আমার প্রিয় একজন মানুষ। তাঁর কাছে গেলে,  তাঁর কথা শুনলে মনে হতো একজন দরদী মানুষের কাছে এসেছি এবং একান্ত দরদ মাখা কথা শুনছি। মল্লিক ভাই তাঁর সমবয়সী এবং তাঁর ছোট বড় সবাইকে মনে প্রাণে ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর সে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় একবিন্দু ফাঁক বা লৌকিকতা ছিল না। সেই মল্লিক ভাইকে নিয়ে লিখতে আনন্দ তো পাচ্ছিই না বরং মনের ভেতরে একদলা কষ্ট অনুভব করছি। এক অব্যক্ত ব্যথা উথলে উঠছে। না আমার মনের কথাগুলো তাঁকে বলতে পারলাম, না তাঁর মনের কথা আমি শুনতে পারলাম। এভাবে না বলে চলে যাওয়ার বেদনা হৃদয়ে বহন করা ভীষণ কষ্টের। এখন শুধু ভাবি কষ্টটুকু আমার মধ্যে থাক, মল্লিক ভাই সুখে থাক। আল্লাহ তাঁকে সুখে রাখুন।

আমার প্রতি তাঁর এতো আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ কেন ছিল জানি না। আমি তো ছিলাম তাঁর কাছ থেকে অনেক দূরে গ্রামে-পাড়াগাঁয়। অথচ দেখা হলেই তাঁর কথায় ও আচরণে মনে হতো আমি যেনো তাঁর খুব কাছের মানুষ। সাথী ভাই। একান্ত আপনজন। বিস্তারিত পড়ুন

নীলাকাশের গায়_আসাদুজ্জামান আসাদ

পাখির মত মিষ্টি সুরে গাও যে গানের বুলি

গান শুনিয়ে কেমন করে তোমায় আমি ভুলি

মাটির টানে স্বদেশ প্রেমে জীবন তোমার ভরা

স্মৃতি ভরা তোমার ছবি ভুলব না যে মোরা

‘আরেক আকাশ’ মিষ্টি সুরে গানের পাখি তুমি

‘তোমার ভাষায় তীè ছোরা’ আপন মাতৃভূমি

তোমার ডাকে বাধ মানে না ‘চিত্রল প্রজাপতি’

তোমার লোভে ফুলের বনে হারাই মতি গতি

খুশির টানে নীলাকাশে  ‘নিষন্ন পাখি উড়ে’

পাঠক দেখি তোমার কাব্য গভীর মনে পড়ে

‘রঙিন মেঘের পালকি’ দেখি নীলাকাশের গায়ে

স্বদেশ প্রেমে মুগ্ধ তুমি হাটছ নাঙ্গা পায়ে

‘পাহাড়ি এক লড়াকু’যে ‘মহানায়ক’ সেজে

সংকলিত ‘ঝংকার’ যেন হাজার সুরে বাজে

তোমার লিখা হৃদয় মাঝে গানের সুরে গড়া

আমার মনে তোমার কাব্য জ্ঞানে গুণে ভরা।

কবি মল্লিক_সৈয়দ নাজমুল ইসলাম

কবি মল্লিক

তিনি দৈনিক

লিখেছেন কত

গান-কবিতা শত।

 

ঘুরেছেন দেশ-বিদেশ

করেছেন সমাবেশ

কবিদের মিলনমেলা

এভাবেই কাটাতেন বেলা।

 

এমনি করেই একদিন

এলো জীবনের শেষদিন

চলে গেলেন পরপারে

সব বাঁধন ছিন্ন করে।

 

রেখে গেছেন মোদের তরে

তাঁর সমস্ত আদর্শ ও গান

সঠিক পথে চলতে হলে

সেসব সুধা পেয় প্রাণ।

গানের পাখি_জিয়াউর রাহমান জনি

গানের পাখি গান গাইতো যে

মিষ্টি মধু সুরের,

মিষ্টি ভাষায় গান শুনতে তার

আসতো মানুষ দূরের।

 

গাইতেন তিনি গলা ছেড়ে

জিকির করতেন আল্লার,

বলতেন তিনি এদের কথা শ্রমিক-মাঝি মাল্লার।

 

ভয় করেননি বুলেট বোমা

ভয় করেননি গুলি,

অন্যায় দেখলে উঠতেন রেগে

আঙ্গুল দুটি তুলি।

 

ছড়ার পাখি গড়ার পাখি

গানের পাখি তিনি,

নামটি তার মল্লিক নামেই চিনি।

যার গানে ঘুম ভাঙে_মোহাম্মদ সায়েদ কবির

যার গানে ঘুম ভাঙ্গে

যার গানে মন জাগে

যার গানেতে দ্বীনের বাণী

ছড়ায় আলো ঝিকমিক,

সে তো আমার গানের পাখি

মতিউর রহমান মল্লিক।

 

যার গানে পাখি নাচে

যার গানে হৃদয় দোলে

যার গানেতে হার মানে

কোকিলে কুহু, কুহু কিক

সে তো আমার গানের পাখি

মতিউর রহমান মল্লিক।

মানব মল্লিক_আরিফুল ইসলাম

মল্লিক ভায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ে

আজও তার কাব্যিক কবিতার মাঝে,

নিত্যদিনের ধর্মীয়তার কুল যায় ঝড়ে

তার কবিতায় ধর্মীয়তার ফুল যায় ঝরে

মল্লিক আজ নেই! রয়েছে কবিতা

আর স্মৃতির পলকে রয়েছে আজ

কলমের কালি, কবিতার খাতা।

সাহিত্য-সংস্কৃতির মহড়া স্বজন প্রীতি

সব রয়েছে নেই শুধু কবি,

তবু কবিতা লেখা, কণ্ঠ সুরের প্রতি

দুর্বল কোনো বা কেউ না হবি।

শুধু নেই, নেই শিল্পী কবি মল্লিক

আগের মত নবসুরে ধর্মের গান

আর গাইবে না মানব মল্লিক।